• নরসিংদী
  • শনিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  শনিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

গল্প : আমানত মুনশি।। নুরুল ইসলাম নূরচান 


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০৮:৩৮ পিএম
গল্প : আমানত মুনশি।। নুরুল ইসলাম নূরচান 

 

চারটি সালিশ বসেছিল আমানত মুনশির বাড়িতে। কিন্তু সে একদিনও উপস্থিত থাকে নি। নানা অজুহাতে সালিশে অনুপস্থিত থাকে। 

সারা গ্রামে একটাই কানাঘুষা, 'আমানত মুনশি এমন একটা বেদাত কাজ কীভাবে করলো! সে এলাকার মধ্যে একজন মান্যগণ্য ব্যক্তি। অথচ এমন একটা অপরাধ করতে পারলো?' 

আমানত মুনশি বাড়ি থেকে বের হলে গ্রামের লোকজন মুখ টিপে হাসে, নানা ধরনের কথাবার্তা বলে। কিন্তু এসবে ও কান দেয় না। তার মতো চলতে থাকে। 

আমানত মুনশি প্রভাবশালী না হয়ে যদি দুর্বল হতো তাহলে প্রথম দিনই তাকে এলাকা ছেড়ে পালাতে হতো। তার অর্থ সম্পদ এবং প্রভাব প্রতিপত্তি আছে বলেই এখনো এলাকায় বসবাস করতে পারছে। সমাজে দুর্বল কোন ব্যক্তি অপরাধ করলে শাস্তি হয় ভয়াবহ, কোন কোন ক্ষেত্রে নিগৃহীতও হতে হয়। অথচ আমানত মুনশি এত বড় একটি জঘন্য কাজ করে এখনো সমাজে বহাল  তবিয়তে রয়েছে।

সালিশের মাতব্বরা প্রতিবারই বলাবলি করেছেন, 'আমানত মুনশি যদি সত্যি এ কাজ করে থাকে তাহলে তাকে সমাজচ্যুত করতে হবে। তা না হলে সমাজে এ ধরনের অপরাধ প্রবনতা আরও বেড়ে যাবে। অন্যায় কাজকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হবে না। সমাজচ্যুত করতে না পারলেও 'একঘরে' করে রাখতে হবে।'

পুনরায় সালিশ বসেছে। আজ আমানত মুনশি স্থানীয় মসজিদের ইমামসহ হাজির হয়েছেন। সালিশে এলাকার মাতাব্বর এবং সকল শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত হয়েছে। সকলের মধ্যে একটা কৌতুহল কাজ করছে, এই জঘন্য অপরাধের কী শাস্তি হয়- তা জানার জন্য। 

ইমাম সাহেবকে লক্ষ্য করে আমানত মুনশি বললো, 'আচ্ছা হুজুর আপনি বলেন তো পবিত্র কোরআন শরীফে সুদ খাওয়ার কথা কতবার নিষেধ করা হয়েছে, আর শূকরের মাংস খাওয়ার কথা কতবার নিষেধ করা হয়েছে?'
-'আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সুদ খাওয়ার কথা নিষেধ করেছে সত্তরবার, আর শূকরের মাংস খাওয়ার কথা নিষেধ করেছেন একবার।'
'যে জিনিসটি একবার খাওয়ার জন্য নিষেধ করেছেন, সেই জিনিসটি না খেলেও আমি একবার খেয়েছি। আর এখানে যারা আমার বিচার করতে এসেছেন তারা সুদের ব্যবসা করছেন দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত। তারা যদি সুদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে তওবা করেন তাহলে আমার বিচার করতে পারবেন। অন্যথায় আমি তাদের বিচার মানি না। এখন তারা কী করবে আপনি বলে দেন হুজুর।'

একথা শোনার পর সালিশে উপস্থিত সকল মাতব্বরগণের মুখ কালো হয়ে গেছে। তারা কী করবেন বা কী বলবেন- কিছুই বুঝতে পারছেন না। একজন মাতব্বর বললেন,'সালিশ আজকের মত মুলতবি  ঘোষণা করা হলো, আমরা অন্য আর একদিন বসবো,  হুজুর আমরা বিদায় নিলাম।'

এলাকার মাতাব্বরগণ জোট বেঁধেছেন, য়ে করেই হোক আমানত মুনশির বিচার তারা করেই ছাড়বেন। তাই তারা সুদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেছেন। সুদ মওকুফ করে আসল টাকা নিয়ে এসেছেন। তারা একাজটা করেছেন মাত্র পনেরো দিনের মধ্যে। 

পনেরো দিন পর পুনরায় সালিশ বসেছে। এতে ওই ইমাম সাহেবও উপস্থিত হয়েছেন। মাতাব্বরগণ বললেন, 'হুজুর আমাদেরকে তাওবা করান, আমরা আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছি।'ইমাম সাহেব তাদেরকে তওবা করালেন। 

এবার মাতব্বরগণ শক্ত গলায় বললেন, 'আমানত তুমি এদিকে এসো, আজ তোমার কঠিন বিচার হবে।'

আমানত মুনশি এগিয়ে এসে সালিশির মাঝখানে দাঁড়িয়ে বললেন, 'আমি শূকরের মাংস খাইনি, আপনাদের সুদের ব্যবসা বন্ধ করার জন্য ফন্দি এঁটেছিলাম। এই মিথ্যে কথাটা রাষ্ট্র করার জন্য আমি কমরউদ্দিনকে পাঁচশ টাকা দিয়েছিলাম। কি রে কমরউদ্দিন আমি ঠিক বলিনি?'
-হ, আফনে আমারে পাঁচশ টেহা দিয়া কইছিলেন-আমি যেন এলাকায় প্রচার করি, আফনে হুয়োরের গোস্তো খাইছেন, আমিও বেবাক রে এই কতাই কইছি!'

রচনাকাল : ১৮ জুন ২০২৪

সাহিত্য বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ